ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি : নীলফামারীর ডিমলায় কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য স্থাপিত তথ্য বোর্ডগুলো কাজে আসছে না । উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে এই স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার এবং তথ্য বোর্ড রয়েছে। এসব যন্ত্রপাতির বেশির ভাগই অকেজো পড়ে আছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নে রেইন গজ এবং তথ্য বোর্ড থাকলেও সচল নেই একটিও।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, কৃষি আবহাওয়া তথ্যপদ্ধতি উন্নতিকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তররে বাস্তবায়নে উপজেলার ১০টি ইউপিতে অটোমেটিক রেইন গজ এবং কৃষি আবহাওয়া তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হয়।এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি করে ট্যাব দেওয়ার কথা । তাঁরা কৃষক ও জেলে থেকে শুরু করে বন্যা কবলিত জনগোষ্ঠীকে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার কথা।
নিয়ম অনুযায়ী,এই তথ্য বোর্ডে আগের ও পরের ৬ দিনের আবহাওয়ার হালনাগাদ তথ্য আপডেট থাকবে।এই তথ্য বোর্ডের মাধ্যমে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, ঝড়ের পূর্বাভাস, আলোকঘণ্টাসহ ১০টি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তা প্রকাশের ব্যবস্থা রয়েছে।যা থেকে কৃষকরা সুফল পাওয়ার কথা।কিন্তু এ উপজেলার ইউপিগুলোতে স্থাপন করা এসব বোর্ডে তথ্য কবে হালনাগাদ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে কেউ জানেন না।
সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে এই কাজের জন্য স্থাপিত স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার এবং তথ্য বোর্ডের কার্যক্রম সচল নেই। যোগাযোগ করার জন্য বোর্ডটিতে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার ফোন নাম্বার নেই।
খোগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের কিসামতের চর গ্রামের কৃষক আরিফুল ইসলামের কাছে ইউনিয়ন পরিষদে থাকা আবহাওয়ার তথ্য বোর্ড সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাড়ি তিস্তার চর এলাকায়। মানুষের কাছ থেকে বা টেলিভিশনের মাধ্যমে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার খবর পাই। আর এই বোর্ডে এক সপ্তাহের আবহাওয়ার খবর দেওয়ার কথা, এর কিছুই করা হয় না।
চর খড়িবাড়ি গ্রামের কৃষক সাধু মিয়া বলেন, আবহাওয়ার তথ্য পেলে আমাদের কৃষিকাজে বেশ উপকার হতো। কখন পানির চাপ বাড়বে, বীজতলা তলাবে কি না বা কখন ধান বা ভুট্টা লাগালে ভালো হবে, এমন তথ্য পেলে আমাদের উপকার হতো।
বেশীর ভাগ ইউনিয়ন ঘুরেই আবহাওয়ার পূর্বাভাস সম্পর্কে কৃষকদের কাছ থেকে একই রকম উত্তর মিলেছে।
টেপাখড়িবাড়ি ইউপির সচিব রমজান আলী বলেন, পরিষদ ভবনের ছাদে একটি যন্ত্র বসানো আছে, সঙ্গে সোলার প্যানেল। আর তথ্য বোর্ড রয়েছে ভবনের নিচতলায়। এর কাজ কী, তিনি নিজেই জানেন না।
উপজেলা সদরের মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ রায় বলেন, এই বোর্ড অপারেট করার বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা তিনি পাননি। আবহাওয়া তথ্য বোর্ডগুলো অকেজো ।
খালিশা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জানান, বোর্ডটি শুধু আমার পরিষদের সামনে লাগানো হয়েছে মাত্র। এ সম্পর্কে আমি কিছুই বলতে পারব না। কেউ তদারকিও করে না।
টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মইনুল হক জানান, আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংক্রান্ত তথ্যবোর্ড টাঙ্গানো আছে ঠিকই। কিন্তু এর সম্পর্কে আমিও জানি না আমার ইউনিয়নের কৃষকরাও জানেন না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলি জানান, কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতিকরণের জন্য একটি প্রকল্প থেকে বোর্ডগুলো দেয়া হয়েছে। এগুলো মনিটরিং করা হয় ঢাকা থেকে।কোনো সমস্যা হলে তারাই এগুলো ঠিকঠাক করে দেবেন। এ বিষয়ে আমরা কোনো নির্দেশনা বা প্রশিক্ষণ পাইনি।