বিশেষ প্রতিবেদক
জোটভুক্ত দল ও শরিকদের জন্য ৫০ থেকে ৬০ টি আসন ছাড়তে পারে আওয়ামী লীগ। এসব আসনে সমমনা রাজনৈতিক জোট ও শরিকদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া দেওয়া হবে।
নির্বাচনে বিএনপি আসবে না ধরে নিয়েই আসন বণ্টন ও উন্মুক্ত রাখার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা আভাস দিয়েছেন। সেই লক্ষ্যে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বর্তমানে সংসদে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত আটজন প্রতিনিধি রয়েছেন। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির ৩, জাসদের ৩, তরিকত ফেডারেশন ১ ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-জেপি’র ১ জন।
এছাড়া ২ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মিত্র বিকল্পধারা বাংলাদেশের। ২৩ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন জাতীয় পার্টির, যারা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন। সংরক্ষিত আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির ১, জাসদের ১ এবং জাতীয় পার্টির ৪ জন সদস্য জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছেন।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের কয়েকজন জানিয়েছেন, বর্তমানে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দলীয় জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো ১৬ থেকে ১৮টি আসন পাওয়ার বিষয়ে সমঝোতায় আসতে পারে। তবে শুরুতে ১৪ দলের শরিকরা ২৫ থেকে ২৮ টি আসন চাইবে বলে জানা যাচ্ছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলভুক্ত দলগুলো ১৩টি আসন পেয়েছিল। ১৪ দলের বাইরে বিকল্পধারা ২টি এবং গণফোরামকে সর্বোচ্চ ২টি আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। আর শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে এলে তাদের ২৫ থেকে ৩০টি আসনের মধ্যে রাখতে দরকষাকষি করতে চায় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।
বিভিন্ন ইসলামি দল, ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টিকে কয়েকটি আসন ছেড়ে দিতে বলবে বলেও জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন নীতিনির্ধারক। তবে তাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে এখনো সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে তেমন কোনো জোরালো আলোচনা নেই।
বিএনপি থেকে বের হয়ে কেউ নির্বাচন করতে চাইলে সেক্ষেত্রে কী কৌশল গ্রহণ করা হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে ভোট করার কথা জানিয়ে ইতিমধ্যেই ১৪ দলের শরিকরা নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে। নির্ধারিত সময় শনিবারের মধ্যেই ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), জাতীয় পার্টি-জেপি, তরিকত ফেডারেশন, সাম্যবাদী দল ও গণতন্ত্রী পার্টি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে বলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়েছে। আওয়ামী লীগও জোটগতভাবে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে ইসিকে।
এদিকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকেই পুরোদমে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম বৈঠকে ১৫টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম চলছে। এটি আজ মঙ্গলবার বিকাল ৪ টা পর্যন্ত চলবে ফরম বিক্রি। দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজে অথবা তাদের প্রতিনিধিরা ২১ নভেম্বর বিকাল ৪টার মধ্যে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ গত শনি ও রোববার ৩০০ আসনেই তাদের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া হলেও জোটবদ্ধ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ শরিক ও মিত্রদের ছেড়ে দেওয়া আসনগুলো সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে লিখিতভাবে অবহিত করা হবে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি এবং জমার কাজ শেষ হওয়ার পর শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয় নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কথা বলবেন।
প্রাথমিকভাবে আলোচনা হতে পারে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু, আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফর উল্লাহ ও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। প্রয়োজন হলে কথা বলবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ১৪ দলের শরিকদের নিয়ে জোটবদ্ধ নির্বাচন গতবারও হয়েছে, এবারও হবে। তবে কোন দলকে কত আসন দেওয়া হবে-সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে শিগগির সিদ্ধান্ত হবে।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ১৪ দলের শরিকদের কাকে কোন আসন দেওয়া হবে-সে বিষয়ে এখনো আলোচনা শুরু হবে দু’এক দিনের মধ্যেই।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আসন ভাগাভাগি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে। শিগগির এ নিয়ে (আসন ভাগাভাগি) আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে সমঝোতার বাইরে কিছু আসন উন্মুক্ত রাখা হতে পারে।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমরা আগেই বলেছি, ১৪ দলীয় জোটভুক্ত হয়েই তার পার্টি নির্বাচন করবে। ইতিমধ্যেই নির্বাচন কমিশনকেও বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগের সাথে বসে আসন ভাগাভাগির বিষয়টি চুড়ান্ত করা হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও নির্বাচনের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ তারা আন্দোলনের নামে ইতিমধ্যেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সেই আগের মত অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে, তাতে জনগণ তাদের সাথে নেই। তাদের হরতাল আবরোধে দেশের মানুষ সাড়া দিচ্ছে না।
