হাসান রাউফুন : ৭ ডিসেম্বর পাকসুরকার ও পাকবাহিনীর মনােবল একেবারেই ভেঙে যায়। আর যৌথবাহিনীর মনােবল আরাে চাঙা হয়ে ওঠে। এই দিনে বাংলাদেশের স্বীকৃতি নিয়ে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় সম্পাদকীয়তে লেখা হয়- ‘স্বীকৃতির তিলক বাংলাদেশের ললাটে।
বাংলাদেশের বিচলিত হওয়ার কিছু পাকবাহিনীর মনােবল একেবারেই নাই। সূর্যোদয়কে যাহারা অস্বীকার করে তাহার অন্ধমাহ, অস্বীকৃতির দৃষ্টিহীনতা সকালের নজিলকে মিথ্যা করিয়া দিতে পারে না।’
পারতর বিবরণ দিয়ে জেনারেল নিয়াজি গােপন বার্তা পাঠিয়েছিলেন রাওয়ালপিণ্ডি হেড কোয়ার্টারে।
বার্তায় তিনি উল্লেখ করেন, সৈনার দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লাকসাম, চাঁদপুর ও যশােরে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। গত ১৭ দিনে যেসব খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে তাতে জল ও সম্পদের বিচারে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে গেছে। রাজাকারের অধসহ শটকে পড়ার সংখ্যা বাড়ছে। নিজেদের ট্যাংক, ভারী কামান ও বিমান সমর্থন না থাকায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে।
রাত ১০টায় ভারতীয় বেতারকেন্দ্র আকাশবাণী থেকে জেনারেল মানেকশ হিন্দি, উর্দু ও পশতু ভাষায় পাকবাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘তােমাদের বাঁচার কোনাে পথ নেই। যৌথবাহিনী তােমাদের ঘিরে রেখেছে। তােমরা আত্বসমর্পণ কর।’ বিখ্যাত ক্র্যাক প্লাটুনের হয়ে একাত্তরের রণাঙ্গনের সম্পূখযােদ্ধা ছিলেন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্ছ।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি বুঝতে পারছিল যে যুদ্ধের ময়দান থেকে তাদের পিছু হঠার সময় এসে গেছে। ৭ ডিসেম্বরের ওই গােপন বার্তা পেয়ে পাকিস্তান সরকারের মনােবল একেবারেই ভেঙে যায়। তারা কোনাে না কোনােভাবে ঘুরে পাঞ্জানাের সুযােগ খুঁজতে থাকে। কিন্তু তক্ষণে যৌথবাহিনীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তাদের প্রতিরােধ ক্ষমতাও বেড়েছে। তাদের মনােবলও হয়েছে আরাে চাঙ্গা। আগের দিনই ভুটান ও ভারতের কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে মুক্তির দিন কাছেই এটুকু বুঝতে পারছিলেন মুক্তিবাহিনীর।
তিনি আরাে বলেন, “৬ তারিখেই ভারত ও ভুটানের স্বীকৃতি মিলেছিল। সারাদেশে এ খবর ছড়িয়ে পড়েছিল । মূলত সেদিন থেকেই ক্ষণগণনা শুরু হয়, কথন পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করবে। কোনাে সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের কথা বলতে পারব না তবে আমরা বুঝতে পারছিলাম : ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই পাকিস্তানি সৈন্যদের আত্বসমর্পণের মাধ্যমে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে। শেষ পর্যন্ত ১২ ডিসেম্বর এসেছিল কাঙ্ক্ষিত দিনটি।
