ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা. বিদেশি ঋণ নিতে হলে পরামর্শকের বোঝা বইতেই হবে: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
বাঙলা প্রতিদিন ডেস্ক : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এছাড়া প্রকল্প ঋণ ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৪২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা।
রোববার (২০)পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা এবং একনেক চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এদিকে, একনেক সভা শেষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে বিদেশি ঋণের প্রকল্পে বাধ্য হয়েই পরামর্শক নিয়োগ দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, যে কোনো বিদেশি বড় ঋণ নিতে হলে ছোট পরামর্শকের বোঝা ঘাড়ে নিতেই হবে। সেটি না হলে তারা ঋণ দিতে চায় না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বে টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়নসহ ১৪ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৩ হাজার এক কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৬ হাজার ৭১৯ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, বে টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি এবং সরকারি তহবিল থেকে খরচ হবে ৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর আসলে সমুদ্রবন্দর নয়, এটি নদীবন্দর। কাজেই আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সমুদ্রবন্দর দরকার। এজন্য বে টার্মিনালের অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। এর একটি আজ অনুমোদন পেলো। আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হবে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে। সব মিলিয়ে এখানে চারটি টার্মিনাল হবে এবং এটি মেগা প্রকল্প হবে। প্রকল্পটি যাতে দ্রুত শেষ হয় সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে রাজনৈতিকভাবে (উপকারভোগী) যুক্ত করায় প্রায় ৫০ শতাংশ প্রকৃত ভাতা পাওয়ার যোগ্য নয়। উপকারভোগী বাছাইয়ে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছিল।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুনসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হলো- জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি-সেক্টর প্রকল্প, চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প (১ম পর্যায়) এবং চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন। এছাড়া গ্রিন রেলওয়ে পরিবহন প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা, তিতাস ও বাখরাবাদ ফিল্ডে দুটি গভীর অনুসন্ধান কূপ খনন, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের খনন সক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্প।
এছাড়া বায়ু দূষণ পর্যবেক্ষণ যন্ত্রপাতি উন্নয়ন- বাংলাদেশ টেকসই পুনরুদ্ধার, জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া প্রকল্প, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বিএডিসি উন্নয়ন- বাংলাদেশ টেকসই পুনরুদ্ধার, জরুরি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া প্রকল্প প্রভৃতি।
সভায় অংশ নেন- পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, নৌ-পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একনেক সভার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন।
বে-টার্মিনাল নির্মাণে প্রকল্প :
বহুজাতিক বাণিজ্যের হাব হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বহুল প্রতীক্ষিত বে টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের আরেক ধাপ সামনে এসেছে। প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার একটি অবকাঠামো সহায়তা প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হয়। পরে ১৩ হাজার ৫২৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি এবং সরকারি তহবিল থেকে খরচ হবে ৪ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। এই প্রকল্প অনুমোদন পাওয়ায় বন্দর উন্নয়নের নতুন দ্বার খুলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (বিটিএমআইডিপি)’ নামের এ প্রকল্পে থাকবে একটি ব্রেকওয়াটার, নেভিগেশন অ্যাকসেস চ্যানেল, সার্ভিস জেটি, অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট, রেললাইন ও অন্যান্য সংযোগ সুবিধা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ২০৩১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও একনেক অনুমোদন পাওয়ায় এখন দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) আমরা অনেক আগেই পাঠিয়েছিলাম। প্রি-একনেক অনুমোদন হয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংক ইতোমধ্যে এই প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে। প্রকল্পে মোট ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে বলে জানায় পরিকল্পনা কমিশন। বাকি অর্থও বিশ্বব্যাংক দেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সম্প্রসারণে এ প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শুরু না হলে পিপিপি মডেলে টার্মিনাল নির্মাণে আগ্রহী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আস্থা হারানোর শঙ্কা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুধু চট্টগ্রাম নয়, গোটা দেশের আমদানি-রফতানি ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আসবে। তৈরি হবে কর্মসংস্থান, বাড়বে বিনিয়োগ।
উল্লেখ্য, বে টার্মিনালের অধীনে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে দুটি নির্মিত হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি)। প্রথমটির জন্য সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এবং দ্বিতীয়টির জন্য আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। তৃতীয় মাল্টিপারপাস টার্মিনালের জন্য আবুধাবি পোর্টস গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে।