বাঙলা প্রতিদিন ডেস্ক : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, ‘স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ও গাজীপুর-২ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য শ্রমিক নেতা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন একজন আদর্শনিষ্ঠ শিক্ষক ও অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধা।
যিনি সব সময় মানুষকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন। যার আশেপাশে গরিব মানুষের ভিড় ছিল। যার বুকে সব সময় বঙ্গবন্ধুর জন্য ভালোবাসা ছিল। যিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বুকে আঁকড়ে ধরে বঙ্গবন্ধু প্রণীত দ্বিতীয় বিপ্লবকে ভালোবেসেছেন মানুষের মুক্তির জন্য।
আহসান উল্লাহ একজন আদর্শনিষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে, একজন রাজনীতির শিক্ষার্থী হিসেবে বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার চেতনার পাশে অতন্ত্র প্রহরীর মতো ছিলেন সবসময়।
রবিবার (১২ নভেম্বর) গাজীপুরের টঙ্গীতে নিউ মেঘনা টেক্সটাইলস মিলস্ আয়োজিত ‘শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের ৭৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানে’ প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।
দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমাকে যদি কোনো মানুষ ভেতর থেকে ভালোবাসে সে মানুষের সৎ হওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে যে ধারণ করতে জানে, সে মানুষ দেশপ্রেমিক না হয়ে পারে না। বঙ্গবন্ধু কন্যা যখন ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন সেদিন থেকে তাঁর পথ চলায় মানুষের ভাত আর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাই ছিল মূল স্লোগান।
আর এই ভাত আর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম লড়াকু সৈনিক ছিলেন আহসান উল্লাহ মাস্টার। বঙ্গবন্ধু কন্যা সেদিন স্মার্ট বাংলাদেশ বা ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলেননি। তিনি বলেছিলেন ভোট আর ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা। কারণ ওই সময় এই দুটি বিষয় ছিল সবচেয়ে বেশি জরুরি।’
সে দিনের শ্রমিক, কৃষকের চেহারায় যে ছাপ ছিল তা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ‘সেই দিনগুলোতে আমাদের শ্রমজীবী মানুষ আর কৃষকের চেহেরায় মলিনতা ছিল। তখন আমাদের খাদ্যে উদ্বৃত্ত ছিল না।
খাদ্যে ঘাটতি ছিল। উত্তরবঙ্গে মঙ্গা ছিল। সেই সময়ে মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করেছে। আজ আমরা স্বাস্থ্যবান, সবল। আজ শ্রমিকের সেই দুঃসময় নেই। মুক্তির পথে পথে হেঁটে আমরা আজ অর্থনৈতিক মুক্তির দাঁড়প্রান্তে। আহসান উল্লাহ মাস্টারদের হাতেই মূলত এই সমাজটি নির্মিত হয়েছে।’
‘এই দেশে একসময়ে জনপ্রিয় নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। সিলেটের শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়েছে। আহসান উল্লাহ মাস্টারকে হত্যা করা হয়েছে। বেছে বেছে প্রতিভাবান নেতাদের হত্যা করা হয়েছে।
একজন কিবরিয়া বা আহসান উল্লাহ মাস্টাররা যদি আজ বেঁেচ থাকতেন তাহলে অর্থনৈতিক মুক্তির পথ রচনায় বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত আরও শক্তিশালী হত। তারা নিজ নিজ অবস্থানে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করতে পারতেন। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে যারা মনেপ্রাণে ভালোবাসতেন বেছে বেছে তাদেরকেই হত্যা করা হয়েছে।’
বঙ্গবন্ধু কন্যার চলার পথও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না উল্লেখ করে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বার বার হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে সেদিন প্রাণ দিতে হয়েছে। শুধু কী তাই, মানুষ গান শুনছে। সকালে রমনার বটমূলে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত শুনছেন গানপ্রেমী মানুষ। সেই সময়ও হামলা হয়েছে। সিনেমা হলে হামলা, মন্দিরে হামলা, একদিনে সারাদেশে সমস্ত জেলায় বোমা হামলা হয়েছে। আজও তারা হামলা করে, অবরোধ করে।’
বঙ্গবন্ধু বেঁেচ থাকলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া তথা বিশে^ নেতৃত্ব দিত উল্লেখ করে দেশের বিশিষ্ট এই সমাজচিন্তক বলেন, ‘আমরা আজ বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মডেল মনে করি। ডক্টর ইউনূসকে নয়। কারণ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এদেশের শ্রমজীবী মানুষ, খেটে খাওয়া অসহায় মানুষ, বেদে, হিজড়া, বিধবাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন, ভাতা দিচ্ছেন।
এর মধ্য দিয়ে তারা অর্থনৈতিক সুবিধার আওতায় এসেছে। এ কারণে সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর হয়েছে। শেখ হাসিনার মডেলে প্রকৃত অর্থেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। আর ইউনূস পুঁজিবাদের উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন, মুনাফা করছেন।’
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আরো বলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধু আর এই দেশ মাতৃকাকে ভালোবাসেন তারা পথ হারাবে না। আমরা সেই জাতি যাদের ত্রিশ লক্ষ মানুষ লাফিয়ে লাফিয়ে প্রাণ দেয়। দু’লক্ষ মা-বোন নির্যাতন সয়ে সয়ে মানচিত্র আঁকে। সেই দেশ নথি শিকারের জন্য সৃষ্টি হয়নি।
কোনো লাল চোখ ভয় পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনেনি। মনে রাখতে হবে, সশস্ত্র অবস্থায় পশ্চিম পাকিস্তানীদের আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা পরাস্ত করেছিল। পোশাক পরিহিত অবস্থায় আমরা তাদের বিদায় করেছিলাম।’
বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনো উন্নত রাষ্ট্র হতে চায় না জানিয়ে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ শুধু বাংলাদেশই হতে চায়। কারণ পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো যখন যুদ্ধ করে আমরা তখন লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দেই। তারা যখন যুদ্ধ করে আমরা তখন শান্তির গান গাই।
বিশ্বব্যাংক যখন বলেছিল পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি হয়েছে, অর্থায়ন করবে না। আমরা তাদের সঙ্গে দ্বন্দে¦ জড়াইনি। আমরা বলেছি দুর্নীতি করিনি। আমরা ঘামে-শ্রমে নিজেদের টাকায় আত্মমর্যাদার পদ্মাসেতু তৈরি করেছি। এটি শুধু সেতু নয়, ওই শক্ত পিলারের সাথে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি খেলা করে।
শেখ হাসিনার স্বপ্ন খেলা করে। আমরা সমুদ্রসীমা বিজয় করেছি, সিটমহল সমস্যা সমাধান করেছি। পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছি কোনো মধ্যস্থতা ছাড়া। বঙ্গবন্ধু কন্যা নিজ দায়িত্বে এই শান্তি চুক্তি করেছেন কাউকে আহ্বান করেনি। শ্রীলঙ্কা এখনো পারেনি। সেখানে তামিল-সিংহলিদের দ্বন্দ্ব আছে।
সুতরাং বাংলাদেশকে লাল চোখ দেখিয়ে লাভ নেই। এদেশে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের জন্য কেউ আসলে তাদের কড়া জবাব দেয়া হবে। কেননা এই প্রিয় দেশমাতৃকা রক্তে রঞ্জিত। ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্তঋণে আমরা জর্জড়িত, রক্তঋণে আবদ্ধ। আমাদের যখনই কেউ পরাভূত করতে আসবে তখন ওই শহিদের রক্ত দেশমাতৃকা রক্ষার জন্য আমাদের উদাত্ত আহ্বান জানায়।
আমাদের গণতন্ত্র আমরা নিজেরা ঠিক করে নেব। বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। আমাদের পথ চলায় বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত থাকুক। গড়ে উঠুক স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।’
নিউ মেঘনা টেক্সটাইলস মিলস্ লিমিটেডের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. জাহীদ আল মামুনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপি।
এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউল্লাহ মণ্ডলসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, গাজীপুরের বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষবৃন্দ।
