নিজস্ব প্রতিবেদক, বাঙলা প্রতিদিন : বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি বছর মাথাপিছু ১৫০ কিলোগ্রাম এবং সর্বমোট ২২.৪ মিলিয়ন টন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৫ সাল নাগাদ মাথাপিছু বর্জ্য সৃষ্টির হার হবে ২২০ কিলোগ্রাম এবং সর্বমোট বর্জ উৎপাদনের পরিমাণ ৪৭ হাজার ৬৪ টনে গিয়ে দাঁড়াবে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্নক হুমকি।
নগর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় 3R (Reduce, Reuse, Recycling)–এর পরিবর্তে কঠিন বর্জ্য ব্যববস্থাপনা মৌলনীতি (বিধি-৬) বর্জ্য ক্রমাধিকার- প্রত্যাখান (Refuse), বর্জ্য হ্রাসকরণ (Reduce), পুনর্ব্যবহার (Reuse), পুনঃচক্রায়ন (Recycle), পুনরুদ্ধার (Recovery), পরিশোধন (Purification) এ গুরুত্ব দেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এর ফলে নগরে অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি হবে, জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং সর্বোপরি প্রকৃতি ব্যবস্থাপনার গুণগত পরিবর্তন হয়ে একটি সবুজ ও স্বাস্থ্যকর নগর গড়ে উঠবে। আজ ৪ জানুয়ারি ২০২২ সকাল ১০:০০ টায় জাতীয় সংসদ ভবনের পার্লামেন্ট মেম্বার্স ক্লাবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ২০২১ বিষয়ক গণশুনানি অনুষ্ঠানে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
তানভীর শাকিল জয়, এমপি, সদস্য, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এর সভাপতিত্বে গণশুনানীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এমপি।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেজাউল করিম বাবলু, সদস্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, এডভোকেট বেগম খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন, সদস্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোঃ সেলিম রেজা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব), ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন, আবু নাসের খান, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং মাইনউদ্দিন আহমেদ, চিফ অব পার্টি, কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনাল।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন ঢাকা ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তাইজুল ইসলাম চৌধুরী বাপ্পী, ঢাকা ১৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ মফিজুর রহমান। সানজিদা জাহান আশরাফী, কনসোর্টিয়াম কো-অর্ডিনেটর, ডিএসকে এর সঞ্চালনায় ঢাকা কলিং প্রকল্প সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করেন সুমন আহসানুল ইসলাম, টেকনিক্যাল এডভাইজর, ইনসাইটস। অনুষ্ঠানে কঠিন বর্জ্য ব্যব্স্থাপনা বিধিমালা ২০২১ সম্পর্কে উপস্থাপনা করেন পরিবেশ বন জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী।
প্রবন্ধ উপস্থাপনায় ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সাথে বাংলাদেশের ১১টি আইন, বিধিমালা ও পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা অতি সম্প্রতি কঠিন বর্জ্য ব্যব্স্থাপনা বিধিমালা ২০২১ প্রণয়ন করেছি। ২০৪১ সালে নগরবাসীর সংখ্যা হবে প্রায় ৮০% এবং ২০২৫ সালে দৈনিক বর্জ্য উৎপন্ন হবে প্রায় ৪৭০০০ টন। বিশাল এ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ জনবলের পাশাপাশি অবকাঠামো তৈরি করতে হবে। সর্বপরি অংশীজনদের সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।
রেজাউল করিম বাবলু এমপি বলেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুযায়ী ডাম্পিং হচ্ছে কিনা তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনিটরিং করছেন। তিনি এই বিধির বাস্তবায়নে নিজ নিজ এলাকায় কমিটি গঠনেরও পরামর্শ দেন।
মোঃ সেলিম রেজা, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব), ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন বলেন, একটি নীতিমালার মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের একটি নীতিমালা করা, যন্ত্রপাতির আধুনিকায়ন করা, পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ ও তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরি। বর্জ কর্মীদের জন্য সরকার একটি আধুনিক ক্লিনার পল্লী গড়ে তোলা হবে।
তাছাড়া, খুব শিঘ্রই সরকার বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বলেন, জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশ যেমন রোল মডেল তেমনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশে^র কাছে রোল মডেল হওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের আছে। আমাদের মোট উৎপাদিত বর্জ্যরে সিংহভাগই গৃহস্থালি বর্জ্য। এটা থেকে চাইলেই আমরা সার, গ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি।
এডভোকেট বেগম খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন এমপি বলেন, এই বিধিমালাটি বাস্তবায়নে আমাদের সকলেরই দায় ও দায়িত্ব রয়েছে। বিদ্যমান বিধিমালার ভুলগুলো সংশোধন করে একটি উত্তম নীতিমালা প্রণয়ন করা ও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ রেখে যাবার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমন্ত্রী বলেন, বর্জ্য কর্মীদের আবাসস্থল, তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়গুলো সরকার গুরুত্বের সাথে দেখছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সকলের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়, তাদের পরিকল্পনা ও কাজে এই বিধির শর্তগুলো বিবেচনায় নেয়া জরুরি। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
তানভির শাকিল জয়, এমপি বলেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১ বাস্তবায়নই হলো মূল চ্যালেঞ্জ। এই বিধিমালাটি বাস্তবায়ন করতে হলে জনসচেতনতা তৈরি করা ও জনগনের সম্পৃক্ততা জরুরি। বর্জ্যকে যথাযথ ব্যবস্থাপনা করতে পারলে তা আমাদের জন্য সম্পদে পরিণত হতে পারে। আমরা বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে তা থেকে বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারি।
এর মাধ্যমে আয়ের সুযোগ তৈরি হতে পারে, জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে। এন্টারপ্রাইজের সুযোগ তৈরি করতে হবে, স্বাস্থ্যসম্মতভাবে জনগনকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ করে দিতে হবে এবং জনগনকে বিকল্প দেখাতে হবে। আর এই সব বাস্তবায়ন করতে হলে একটি গাইডলাইন প্রণয়ন জরুরি। সঠিক ও টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে দেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।
রাজধানী ঢাকাসহ পৌর শহরগুলোর মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের হাজার হাজার টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। ডোর-টু-ডোর সংগ্রহ ব্যবস্থায় যথাযথ সচেতনতা এবং অংশীদারদের সহায়তা। উৎসস্থলে বর্জ্য সংরক্ষণের উপযুক্ত নকশা প্রণয়ন ও বর্জ্য পরিবহনের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
