“বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা ছিলেন, আন্তর্জাতিক নেতা ছিলেন”

আল আমিন এম তাওহীদ : ১৯৭১ সালে ভিটেমাটি ছাড়া সবকিছু হারিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। সেই বিধ্বস্ত জাতিকে আলোর মুখ দেখাতে ১৯৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত একটি ঘুরে দাঁড়ানোর বাংলাদেশ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার গল্পের মহানায়ক এই বঙ্গবন্ধু।

যখন বিশ্বের শক্তিশালী দেশ দেখলো বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে এবং বঙ্গবন্ধুর নীতি মেধা দক্ষতা দিয়ে একটি বিধ্বস্ত দেশকে সফলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন ঠিক তখনি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ষড়যন্ত্রকারীরা চায়নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক নেতা হোক। তাদের আশা ৭৫ এর ১৫ আগস্ট সেটি সফল করে দেশ ও জাতিকে আরেকটা ধ্বংসস্তুপে পরিনত করে। ভ’,য়ংক’,র নীলনকশায় এরপর জাতীয় ৪ নেতাকেও কারাগারে শেষ করে দেয়। অর্থাৎ স্বাধীনতার পরে যে কয়জন দেশপ্রেমিক নেতা ছিলেন তাদের কাউকে বাঁচিয়ে রাখেনি। ৩০ লক্ষ শহীদের র’,ক্ত আর একটি পতাকাকে এই ষড়যন্ত্রকারীরা যেমন স্বীকৃতি দেয়নি তেমনি স্বাধীনতার পরিচয়ে বাঙালি দিবে সেটাও তারা মেনে নিতে পারেনি।

মনে করেন, ১৭১১৮ বর্গকিলোমিটার নিয়ে মরুভূমি রাষ্ট্র কুয়েত। ৬৯৯ বর্গকিলোমিটারের সিঙ্গাপুর সেটিও একটি ছোট দেশ কিন্তু সম্পদে ভরা। কত উন্নয়ন সমৃদ্ধশালী এসব দেশ। বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে ১,৪৭,৬১০ বর্গকিলোমিটারের বাংলাদেশও সম্পদে ভরা থাকতো। আমরা বাঙালি জাতি শান্তিপূর্ণভাবে যেমন বসবাস করতাম তেমনি অভাব নামক শব্দ কখনোই আমাদের স্পর্শ করতে পারতো না। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতা হারানোর যে প্রভাব সেটা আজ আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। ওরা এটাই ভাবতো এই কয়জনকে হ’,ত্যা করলে আগামি ১০০ বছরেও বাংলাদেশ দাঁড়াতে পারবে না এইসময়ে দেশ পুনরায় পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।

কুয়েত সিঙ্গাপুর এগিয়ে গেলেও আমাদের সবুজায়নে ভরা এইদেশ সে অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারেনি। কারণ একটা সংসারের অভিভাবকদের যদি শেষ করে দেয়া হয় তাহলে ওই পরিবার কিংবা সংসার কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা তা সন্দেহ। বঙ্গবন্ধুকে হ’,ত্যা করেনি, করেছিল একটি বাংলাদেশকে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আজ বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ নামক দেশটি মাথা উঁচু করে যেমন চলতে পারতো ঠিক পৃথিবীর মধ্যে একটি শক্তিশালী দেশ হতো বাংলাদেশ। কারণ বঙ্গবন্ধুর আমলে তার যে বুদ্ধি মেধা দক্ষতা ছিল সে আমলে তা বিশ্বের মধ্যে এমন মেধাবী বুদ্ধিমান মানুষ এবং রাষ্ট্র প্রধান খুবই কম ছিল। আমরা আজ ভাবছি অমূল্য রতন হারিয়ে, আমরা কাঁদছি এমন নেতা হারিয়ে।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন, কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষের একজন আপন। তার প্রতিটা ভাষণে দেশের মেহনতী মানুষের কথা ছিল। কৃষক শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে লড়াই করেছেন। ৭ কোটি মানুষের অধিকারের জন্য ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন তবুও মাথা নত করেনি। পাকিস্তান বঙ্গবন্ধুকে বার বার হ’,ত্যা করার জন্য চেষ্টা করলেও বিশ্বের বিভিন্ন শক্তিশালী দেশের চাপে তাকে শেষ করতে পারেনি। বড়ই আফসোস হয় নিজ দেশের কিছু কু,’লাঙ্গা’,রের হাতে জীবন দিতে হয়েছে এই মহান মানুষটাকে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় নেমে আজ আন্দোলন সংগ্রাম করতে হতো না। কারণ তিনি এমন মানুষ ছিলেন সবার সুখ দুঃখ বলার আগেই বুঝতেন।

আমাদের বাঙালি জাতির একটা বড় সমস্যা হলো লো’ ভ লা’,লসা। ব্যক্তি স্বার্থের জন্য আমরা পরিবারের মা-বাবকেও শেষ করে দিতে কোনোভাবে পিছপা হবো না। তৎকালীন সময়ে ক্ষমতার লো’,ভ আমাদের দেউলিয়া করে তোলে। যারা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতার হ’,ত্যার জড়িত ছিল তারাও কিন্তু বেঁচে থাকতে পারেনি। কেউ সেনাবাহিনীর হাতে শেষ হয়েছে আবার কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। যারা বঙ্গবন্ধুকে হ’,ত্যা করেছে তারা দেশকে নিয়ে ভাবেনি। শুধু ক্ষমতা এবং সম্পদের লো’,ভে একটা দেশ ও জাতিকে ধ্বং’,স’,স্তুপ পরিনত করে। সে সময় কেউ যদি দেশ ও জাতির কথা ভাবতেন তাহলে কোনোদিনও এই মহান মানুষটাকে হ’,ত্যা না করে তাকে আন্তর্জাতিল ষড়যন্ত্রের হাত থেকে র’,ক্ষা করতেন। এজন্য এই জাতির প্রতি আজ ঘৃণা হয়, তারা স্বার্থেী নিজের দেশকেও ধ্বং’,স করে দিতে পারে।

শুধু এখানেই শেষ হয়নি ষড়যন্ত্রকারীরা। তাদেরকে হ’,ত্যা করে বি-কৃ-ত চ’,রিত্রহী’,ন মানুষের মতো চরিত্র নিয়ে ইতিহাস ভ’,য়া’,নকভাবে বি-কৃত করেছে। যাতে এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে এবং প্রতিবাদের জন্য বের না হয়। ইতিহাসে দেখলাম যেদিন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় সেদিন বাংলাদেশ এবং বিশ্ব নিস্তব্ধ হয়ে যায়। বিশ্ব মনে করেন এই মহান মানুষটাকে কিভাবে হ’,ত্যা করতে পারলো? যে লোকটায় জীবন যৌবন কারাগারে শেষ করেছে এবং যার ডাকে ৭ কোটি মানুষ অধিকারের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। সেই মানুষটাকে মাত্র ৩বছরের মাথায় শেষ করে দেয়া বিশ্বের একটা ক’,লংক’,ময় অধ্যায় ছিল।

আজ আমরা তরুণ প্রজন্ম তার প্রতিটা ভাষণ ও বইয়ের লেখা থেকে জানতে পারি বঙ্গবন্ধু একজন সত্যিকারের মহানায়ক ছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে শুধু বাংলাদেশই নয় আন্তর্জাতিক নেতা হতেন আর আমরা বাঙালি জাতি বিশ্ব দরবারে হয়ে উঠতাম বিজয়ী এবং শক্তিশালী জাতি। তখন পুরো বিশ্ব আমাদের সম্মান শ্রদ্ধার চাদরে দেখতেন। হয়তো তার শূণ্যতা অনেকে উপলব্ধি না করলেও আমরা তরুণ প্রজন্মরা এখন উপলব্ধি করছি, তার মতো নেতা এদেশে আর জন্ম নিবে না আর হবেও না এবং হয়নি। যদি হতো তাহলে বাংলাদেশ আজও জাতিসংঘের তালিকায় দরিদ্র দেশে থাকতো না। যদি সিঙ্গাপুর, কুয়েত স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ হয়। তাহলে বাংলাদেশ তাদের চেয়ে কয়েকগুণ বর্গকিলোমিটারের দেশ ৭৫ এর পরে বিশ্বের কততম সমৃদ্ধশালী ও শক্তিশালী দেশ হওয়ার কথা ছিল?

বাঙালি শিক্ষা দীক্ষায় সেসময়ে পিছিয়ে থাকায় এসবের হিসেবে বুঝতে পারেনি এবং জানতেও চায়নি। কারণ ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিরা আমাদের বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শিকলে যেমন বন্ধি করে রাখতো তেমনি আমাদের প’,শুর মতো হালচাষ করিয়ে সম্পদটুকু তারাই নিয়ে যেতো। আমরা ছিলাম একটা নিপী’ ড়িত নি’র্যা,তিত জাতি। বিশ্বের ইতিহাসে এমন কোনো দেশই ছিল না। সেই সকল বাঁধা মোকাবিলার জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস যু’,দ্ধ আর ৩০ লাখ শহীদ ২ লাখ মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে পেয়েছিলাম স্বাধীনতা ও একটি লাল সবুজের পতাকা। এইসব অর্জনের পেছনের মহানায়ককে ৩ বছরের মাথায় তার অর্জিত স্বাধীন ও নামের বাংলাদেশ থেকে চিরতরে বিদায় করে দেয়ার জাতি হয়তো আমরাই। ভাষায় প্রকাশ কিভাবে করব বা লিখবো আমরাতো আজও নিঃশ্ব হয়ে আছি। আমরা ঘুরে আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারিনি।

এখনো এদেশে বিশ্বসেরা উদ্ভাবক আবিষ্কারক জন্ম নেয়নি বা হয়নি। আমাদের দেশে একটি মোবাইল ফোন তাও আমদানি করতে হয়। বাইকের সামান্যতম পার্টস তাও বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেশের জন্য কি অবদান রাখতে পেরেছি বা দেশকে কি দিতে পেরেছি? তবে এসব প্রশ্ন কার ওপরে রাখব? এখনো এদেশের আকাশে বাতাসে সেই পাকিস্তানের পরাধীনতার লোকদের গন্ধ পাচ্ছি। তারা এখনো চায় না এইদেশ এগিয়ে যাক বা যাবে। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আমরা নিজের দেশে উদ্ভাবনী হতে পারলাম না। সামান্য রিকশা সাইকেলের একটা পার্টস সেটিও চায়না থেকে আমদানি করতে হয়। সোনার দেশে পোশাক শিল্প ও ওষুধ শিল্প না থাকতে হয়তো আমাদের আজ ইয়ামেনিদের মতো না খেয়ে মরতে হতো। আমাদের মেধা ও বুদ্ধিটুকু আজও সঠিকভাবে ব্যবহার না হয়ে যত ধরনের ক্ষতিকারক কাজ আছে সেখানে ব্যয় হচ্ছে। একেক জনের বড় বড় ডিগ্রি এবং সার্টিফিকেট থাকলেও তা কাজে ফলাফল শূণ্য। যেমন এসব শিক্ষিতদের নেই নীতি নৈতিকতা তেমনি একটি নীতিবান সমাজ তারা আজও নতুন প্রজন্মের হাতে দিতে পারেনি।

বঙ্গবন্ধু এই শিক্ষিত চো’,র’,দে’,র বিষয়ে প্রতিবাদ করতেন। সেটিই শেষ পর্যন্ত তার জন্যে কালসাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার বাসার কাজের লোকটি আর একজন কৃষকের সবজির গল্প ১০ টাকা তিনি লিখে গেছেন। বলেছিলেন, ‘যে দেশে ওপর থেকে নিচে নামলেই চু’,রি হয়ে যায়। তারপর একটা ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ পাকিস্তান সবকিছু নিয়ে গেছে রেখে গেছে শুধু চো’,রগুলো-এই চো’,রগুলো এখন সব লুটপাট করে খায়’।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন, কৃষির উন্নতি ছাড়া এ দেশের মানুষের মুক্তি আসতে পারে না। কৃষকরাই এ দেশের প্রাণ। তাই তিনি সবসময় বলতেন, ‘আমাদের চাষীরা হলেন সবচেয়ে দুঃখী ও নির্যাতিত শ্রেণী এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের উদ্যোগের বিরাট অংশ অবশ্যই তাদের পেছনে নিয়োজিত করতে হবে। এই মানুষটাকেই হ’,ত্যা করেছিলাম আমরা। এখনো তাকে নিয়ে এদেশে কিছু মানুষ উল্টাপাল্টা কথা বলার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নানা ধরনের ক’,টু’,ক্তি হয়৷ এই হতভাগা জাতি আজ বুঝতে পারেনি ‘বঙ্গবন্ধু মানেই একটি বাংলাদেশ’। দলমত ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বঙ্গবন্ধু সবার এবং দেশ মাটি ও মানুষের।
হে প্রজন্ম তোমরা ঘৃ’,ণা করো তাদেরক, যারা বঙ্গবন্ধুর মতো মহান নেতাকে হ’,ত্যা করেছে সেসব কু’,লা’,ঙ্গা’,দে’,র।
শোকাবহ বে’,দনা’,দা’,য়ক আগস্ট এই মহান নেতার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা তরুণ প্রজন্মের চিরস্মরণীয় বুকভরা ভালোবাসা।
বাংলাদেশ যতদিন আছে বঙ্গবন্ধু যুগে যুগে বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।
(লেখক : আল আমিন এম তাওহীদ, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী)।