সুমাইয়া আকতার : আমাদের ভূমিষ্ঠ হবার পরপরই মা আবারও নতুন করে জন্মগ্রহণ করেন। বেড়ে যায় তার হৃদয়ের আলোড়ন, বেড়ে যায় অসীম মমতা মাখা আদরগুলো আর অপরিসীম যত্নগুলো।ভুলে যান নিজের কথা,সমাজের কথা।
আর বেড়ে উঠি আমরা।আমরা কি সঠিকভাবেই এই মাকে সম্মান শ্রদ্ধায় ভালোবাসতে পারি? নাকি ১৪ ই মে “মা দিবস” এলেই হন্যদন্ত হয়ে লেখালেখি করি বা মানুষকে দেখাই আমরা কতটা ভালোবাসি? আমরা যদি মায়ের সুসন্তান হয়ে বেড়ে উঠি সকল দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করি তাহলে একটা নির্দিষ্ট দিন কি আসলেই পারে মায়ের গুরুত্ব মর্যাদাকে জাগিয়ে তুলতে! রোজই আমরা মাকে ভালো রাখতে পারি, রোজই তার পাশে থেকে তার জীবনটা সুন্দর করে তুলতে পারি।
নাড়ি ছেঁড়া আমরা সন্তানেরা এই নাড়ির টানেই বারবার মায়ের কাছেই ফিরে আসি শত প্রতিকূলতায়।কারন এই দুয়ার আজীবনের জন্য আমাদের জন্য খোলা।জীবনের রোজকার একঘেয়ে রুটিনের চাকা যখন জীবনকে দূর্বিষহ করে দেয় একটু একটু করে তখন পরম মমতা মাখা হাত দুখানা দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে জীবন যেন চাঙা হয়ে ওঠে। এই ঋণ কি আদৌও শোধ করা সম্ভব!
কর্মজীবি মায়েরা, শ্রমজীবি মায়েরা,নির্যাতিতা মায়েরা কখনোই সন্তানকে ছেড়ে সুখে দিনাতিপাত করেন না,অথচ আমরাই এত আদরে বড় হয়ে তাকেই ভুলে যাই।যেসব ঘরে মায়েরা দিনের পর দিন নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে থাকেন তার প্রধান কারন” সন্তান”। বুকে পিঠে ঝোলায় করে সন্তান বহন করে অক্লান্ত শ্রম দিয়ে যান প্রখর রৌদ্রময় দিনগুলোতে, রাত ফুরিয়ে যায় কাজের ভারে। এর ভিতরে আমাদের দিকে সর্ব বিষয়ে নজর দিতে মা ভোলেন না।
মা মা ই হয়,পাগল হয়না। তাকে মা হিসেবে পাগল বলা যায়না। পাগল যখন মা হন তখনও সে তার সন্তানকে দু’মিনিটের জন্য কোথাও রাখেনা, খাওয়ানোর চেষ্টা করে, কখনো কখনো সন্তানের জন্য মানুষের কাছে সাহায্য চায় অথচ সন্তান প্রসব আগেও দিব্যি পাগলামিই করে গেছে।
একটি শিশুকে নয় মাস গর্ভে ধারণ করা, তাকে লালন-পালন করা, নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা এবং জন্ম দেওয়া এমন এক অভিজ্ঞতা যা পৃথিবীর আর কোনো মানুষ ভাষায় ব্যাখ্যা করতে পারবে না। একজন মা তার সন্তানের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানার সাথে সাথে তার সন্তানের সাথে একটি শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে। এমনকি নাভি ছিঁড়ে যাওয়ার পরেও, এই বন্ধন দিনে দিনে আরও শক্তিশালী হতে থাকে।
সন্তানকে বলতে হবে না, আমি তোমাকে ভালোবাসি, মা, বা মা তার সন্তানদের প্রতি তার অনুভূতি দেখানোর জন্য। এটা অকথ্য এবং সবসময় মনের পিছনে আছে. মা দিবস উদযাপন মাতৃত্বের সারমর্ম উদযাপন করার একটি উপায় মাত্র। বাচ্চারা কখনই তাদের মায়ের ঋণ শোধ করতে পারে না, যারা তাদের বাচ্চাদের লালন-পালন করতে এবং তাদের স্বাধীন করতে অনেক কষ্ট করে। এই দিনটির উদযাপন স্নেহ, ভালবাসা এবং একে অপরের যত্নের চিরন্তন বন্ধনকে উপভোগ করার একটি উপায় মাত্র।বিবর্তনে সমাজ রাষ্ট্র পরিবেশ বদলে যায় কিন্তু বদলায় না আমাদের জনমদুখিনী মা আর তার হাত দুটো।
১৯০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম মা দিবস পালন করা হয়।
১৯১৪ সালের ৯ মে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন একটি আইন পাস করেছিলেন। যেখানে বলা হয়েছিল মে মাসে দ্বিতীয় রোববার মা দিবস পালন করার কথা। তারপর থেকেই যুক্তরাজ্য, ভারত এবং আরও অনেক দেশে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার মা দিবস পালন করা হয়। বর্তমানে ৪০টিরও বেশি দেশ ওই উৎসব পালন করে থাকে।তবে ১৯১২ সালে মা দিবস পূর্নাঙ্গ রূপ লাভ করে “মাদারস ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি)” স্থাপনের মাধ্যমে।
একমাত্র ইসলাম ধর্মেই মা কে দেওয়া হয়েছে অভাবনীয় মর্যাদা। মহান আল্লাহপাক রাসূল (সাঃ) এর পরে মাকে সর্বোচ্চ আসন দিয়েছেন। বলা হয়েছে “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”।
আর আমি (আল্লাহ) মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে; তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন ও অতিকষ্টে প্রসব করেছেন এবং লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)।
‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার (আল্লাহর) প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)।
পরিশেষে বলব, মা এর প্রতি সম্মান ভালোবাসা শুধু যেন একটি দিনের জন্য না হয় বরং প্রতিটি দিনই যেন হয় মায়ের জন্য।আমরা যেন সেই সুযোগ্য সন্তানই হয়ে উঠতে পারি সর্বস্থান থেকে যেন পৃথিবীর কোন মাকেই যেন অবহেলার দিন না গুনতে হয় আর যেন ঠাঁই না হয় সমাজের এক কোণে ছিটকে থাকা বৃদ্ধাশ্রমে।
লেথক : শিক্ষার্থী, বরিশাল সরকারী বিএম কলেজ
