জাতীয় অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী
বাঙলা প্রতিদিন: ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয় দিবস আজ রোববার। এ দিবসে সারাদেশে একযোগে প্রচার করা হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০ বছর আগের ঐতিহাসিক ভাষণ। ঠিক যে সময়ে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিয়েছিলেন ঠেক সেই সময়ে বিকেল ৩টা ১৮ মিনিটে এই ভাষণ প্রচার করার কথা রয়েছে।
পাশাপাশি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের ৬৬০ থানায় একযোগে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার ও জাতীয় দিবস উদযাপন করবে বাংলাদেশ পুলিশ। এই ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠান বিকেল ৩টায় বিটিভিসহ সব টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করা হবে বলে জানিয়েছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এদিকে জাতিসংঘে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন করা হচ্ছে।
এলক্ষ্যে তিন দিনের কর্মর্সূচির প্রথম দিনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ জাতিসংঘের সব দাপ্তরিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির সেমিনারকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফিন।
প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, ‘৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু যে সময়টিতে ভাষণ দিয়েছিলেন, ঠিক সেই সময়ে সারাদেশে সকল মাধ্যমে ভাষণটি প্রচার করা হবে, ৩টা ১৮ বা ২০ মিনিটে। আমরা কাছাকাছি সময়ে থাকার চেষ্টা করব।’ তিনি বলেন, ‘ভাষণটি বিটিভিসহ সব টিভি চ্যানেল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে।’
সচিব মো. বদরুল আরেফিন বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর সেসময়ের ভাষণের কাছাকাছি সময়ে প্রচারের চেষ্টা করব। বাংলাদেশে তখন আর কোনো অনুষ্ঠান হবে না। সেই সময়ে শুধু ভাষণটি প্রচার হবে। ৫০ বছর আগে যে সময়ে বক্তব্যটি প্রচার হয়েছিল সেসময়েই আমার প্রচার করবো বলে সব মহল থেকে সুপারিশ হয়েছে।’
ভাষণটি সরকারিভাবে পিআইডির (তথ্য অধিদফতর) কাছে আছে এবং সেটি বিটিভি থেকে সব মাধ্যমে সম্প্রচার করা হবে বলে জানান সচিব।
এদিকে হাইওয়ে পুলিশের থানাসহ দেশের ৬৬০ থানায় বিকেল ৩টায় একযোগে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ দিবস উদযাপন করবে বাংলাদেশ পুলিশ। এই সময়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ প্রচার করা হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে দিবসটি উদযাপনে আলোচনা সভা, প্রীতিভোজের আয়োজন ও মিষ্টি বিতরণ করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই অনুষ্ঠানে যোগ দেবে। অনুষ্ঠানে পুলিশ সদস্য ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রশাসনসহ নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
জাতিসংঘের সব দাপ্তরিক ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ : বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস ও ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপন করছে। এ উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। আজ ৭ মার্চ দূতাবাসে এবং ৯ মার্চ ইউনেস্কোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে দুটি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হবে। গত ৫ মার্চ জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ: একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী তথ্যচিত্র’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিন দিনের এই কর্মসূচি শুরু হয়।
প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দপ্তরে এই অনুষ্ঠান হয় বলে বাংলাদেশ মিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন প্রকাশিত বইটিতে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর বিশেষ বাণী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যৌথভাবে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন ইংরেজি, ফরাসি, স্প্যানিশ, আরবি, রুশ ও চীনা ভাষাভাষী ইউনেস্কোতে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, আইভোরি কোস্ট, সেনেগাল, স্পেন, কিউবা, সৌদি আরব, মৌরিতানিয়া, কুয়েত, রাশিয়া, চীন ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধিগণ।
পাশাপাশি তারা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজী ইমতিয়াজ স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ছিল মূলত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। এ ভাষণ দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তি সংগ্রামে মূল অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।’ তিনি যৌথভাবে এ গ্রন্থ উন্মোচনে অংশগ্রহণকারী সব দেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধিদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধিগণ তাদের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সফল নেতৃত্ব প্রদানে এবং বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করেন এবং এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার জন্য ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এ বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রকাশনাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও তারা অভিমত ব্যক্ত করেন। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবরে ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে মেমোরি অব দি ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
এ ভাষণটিসহ মোট ৭৭ টি গুরুত্বপূর্ণ নথিকে একইসঙ্গে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই প্রথম বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ জাতিসংঘের সব দাপ্তরিক ভাষায় অনূদিত হলো। ইউনেস্কো সদর দপ্তরে কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় শুধু আমন্ত্রিত অতিথিদের উপস্থিতিতে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং দূতাবাসের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
