মোল্লা জালাল : আজ ২৪ ডিসেম্বর দেশের প্রাচীনতম ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন দলীয় নেতাকর্মীদের উৎসাহের শেষ নেই; তেমনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ও জল্পনা-কল্পনা ঘুরে বেড়াচ্ছে যে, সম্মেলনে কি হতে যাচ্ছে। দলের নেতৃত্বে কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে, নাকি অন্য কোনো ধরনের সংযোজন হতে যাচ্ছে। এদিকে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর ঘোষণা দিয়েছেন। ধরে নেওয়া যায় ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর ঘোষণাই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান ইস্যু।
(আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবার ঘোষনা দিয়েছেন, স্মার্ট বাংলাদেশর। এ ঘোষণাটি বিশ্লেষণ করলে ধরে নেওয়া যায় এর মধ্যে থাকছে, অধিকতর সুশাসন, জবাবদিহিতা, উন্নয়ন এবং আত্মমর্যাদা। আজকের বাংলাদেশে সুশাসনের ক্ষেত্রে ক্রমাগত সংকট দেখা দিচ্ছে। সুশাসনের অভাবে মানুষ ন্যায়ভিত্তিক অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। ক্ষেত্রবিশেষ উন্নয়নও ব্যাহত হচ্ছে। আগামীর বাংলাদেশে অধিকতর সুশাসন নিশ্চিত হলে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে। জবাবদিহিতা থাকলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আসবে। উন্নয়ন ব্যাহত না হলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এবং তাতে জাতির আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে)
প্রশ্ন হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ শ্লোগানটির মধ্যে কী আছে বা থাকতে পারে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে চমক ছিল, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। সে সময়ে এই শ্লোগানটি নিয়ে তখন কম কথা হয়নি। বহুজন বুঝে না বুঝে নানা রকমের টিপ্পনিও কেটেছে। তার কারণ ছিল, যে সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর ঘোষণা দেন সে সময়ে দেশের সার্বিক অবস্থা পরিপূর্ণ এনালগ পর্যায়েও ছিল না।
তাই এ ঘোষণা সে সময় অনেকে অলীক স্বপ্ন বলতেও দ্বিধা করেননি। কিন্তু আজকের দিনে গোটা বাংলাদেশটাই ডিজিটাল। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর ঘোষণাটি বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি চ্যালেঞ্জিং পদক্ষেপও নিয়েছিলেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ব্যাপক সংখ্যক তারুণ্যের সমাবেশ ঘটানো। নবীন ও প্রবীণ সমন্বয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব পদে পদে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশটাকে ডিজিটাল করেছে।
আজকে বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকায় ডিজিটালাইজেশনের সুফল দৃশ্যমান। আর্থিক কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, আনন্দ-বিনোদন, যোগাযোগ ও প্রশাসনিকসহ সবক্ষেত্র এখন ডিজিটালাইজড্। এখন আর ডিজিটাল নিয়ে কেউ কোন কটূক্তি কওে না। কারণ ডিজিটালাইজেশনের ফলে বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে প্রভূত সাফল্য অর্জন করেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবার ঘোষনা দিয়েছেন, স্মার্ট বাংলাদেশর। এ ঘোষণাটি বিশ্লেষণ করলে ধরে নেওয়া যায় এর মধ্যে থাকছে, অধিকতর সুশাসন, জবাবদিহিতা, উন্নয়ন এবং আত্মমর্যাদা। আজকের বাংলাদেশে সুশাসনের ক্ষেত্রে ক্রমাগত সংকট দেখা দিচ্ছে। সুশাসনের অভাবে মানুষ ন্যায়ভিত্তিক অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত। ক্ষেত্রবিশেষ উন্নয়নও ব্যাহত হচ্ছে। আগামীর বাংলাদেশে অধিকতর সুশাসন নিশ্চিত হলে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হবে। জবাবদিহিতা থাকলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আসবে। উন্নয়ন ব্যাহত না হলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এবং তাতে জাতির আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর মধ্যে এ বিষয়গুলোর প্রাধান্য থাকবে। আর লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাটি বাস্তবায়নের জন্য একটি টীম গঠন করতে পারেন। দলে আসবে বা থাকবে সেই সব মুখ যারা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের অগ্রসেনা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
আওয়ামী লীগের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, সময়ের দাবিতে এই দলটির পরিবর্তীত হওয়ার দূরদর্শীতা আছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আওয়ামী লীগ সময়ে সময়ে বদলে গেছে। দলের নাম থেকে শুরু করে নেতৃত্বে ক্রমাগত পরিবর্তন এসেছে। এক সময় যাদের ছাড়া আওয়ামী লীগের কথা ভাবাই যেত না তাদের নেতৃত্ব ছাড়াও দল সুসংগঠিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। নেতৃত্বের এই পরিবর্তনকে অবশ্য অনেকে যৌক্তিক মনে করতেন না।
এ নিয়ে ভিতরে বাইরে নানা কথা হলেও দলের সভাপতি তার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় পরবর্তীতে দেখা যায় তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটাই সঠিক। কারণ, আওয়ামী লীগ সব সময়ই সময়ের দাবিকে ধারণ করে পথ চলে। বলতে গেলে বর্ষীয়ান কোনো নেতা আওয়ামী লীগের বর্তমান নেতৃত্বে নেই। তারা আছেন, পরামর্শক হিসেবে। দল চলছে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং মধ্যবয়সীদের নেতৃত্বে। তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
একটা সময় ছিল যখন অন্যান্ন পেশার লোকজন আওয়ামী লীগে আসতে চাইত না। কিন্তু এখন আর সেদিন নেই। এখন সকল শ্রে-িপেশার মানুষ আওয়ামী লীগে আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। অনেকে বলেন, এতে নাকি দল লক্ষ্যচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। অনাদর্শিক অনেকে দলে ঢুকে পড়ছে। আগেই বলেছি, আওয়ামী লীগ সব সময়ই সময়ের দাবিকে সামনে রেখে পথ চলে। সারা দুনিয়ায় এখন তারুণ্যের জয়গান।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকতে পাওে না। প্রবীণদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় তুরুণ নেতৃত্বকেই সব চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে হয়, হচ্ছে এবং হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের নেতা শেখ হাসিনার নজর সেদিকেই। যার ফলে তিনি আজ একই সাথে ভারত, চীন, রাশিয়া এবং বৈরি আমেরিকার সাথে একই মাত্রায় সুসম্পর্ক রেখে বিশ্ববাসীর ভাবনায় বাংলাদেশকে বিস্তিৃত করে চলেছেন। ভূখণ্ডের পরিমাপে ছোট্ট এই বাংলাদেশ এখন বিশাল সম্ভাবনা ক্ষেত্র। বাংলাদেশকে নিয়ে এখন অনেকেই চিন্তাভাবনা করে।
সময়োচিত সিদ্ধান্তগ্রহণ ও পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার এই দৃঢ়তাকে ধরে নেওয়া যায় আওয়ামী রাজনীতির আধুনিকায়ন। আর এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি আগামীদিনে দলের নীতি নির্ধারণে এবং কর্মপরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসে তবে মনে করতে হবে আওয়ামী লীগ সময়ের দাবিকে ধারণ করে এগিয়ে চলার আরেকটি পদক্ষেপ নিচ্ছে।
আর এই সময়কে ধারণ করার প্রক্রিয়ায় দলের সাংগঠনিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ, অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমন্নত রেখে সামগ্রীক উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামীর বাংলাদেশের জন্যই আওয়ামী বদলে যাচ্ছে, হয় তো আরো যাবে। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘোষণাটির বাস্তবায়নের জন্য দলের কেন্দ্র থেকে শুরু কওে তৃণমূল পর্যন্ত বড় ধরনের সংস্কারের পদক্ষেপও নিতে পারেন।
দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দলে এক শ্রেণির লোকের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। এসব আঙ্গুল ফোলা লোকগুলোকে দল থেকে বিদায় দিলে কোনো ক্ষতি হবে না। ওদের কারণে দলে নতুন কেউ আসে না। আবার আসলেও জায়গা পায় না। ভোটের রাজনীতিতে এসব লোক কোনো কাজে লাগে না। তারা মূলত ভোট বেপারি। এসব কারণেই আগের দিনের লোকেরা বলতো ‘দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভাল’।
আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সৈয়দ আশরাফ ইসলাম দলের ২১তম কাউন্সিলে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ কোনো দল নয়, একটি অনুভূতি। এই অনুভূতির কারণেই মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকে। প্রয়াত নেতার মূল্যায়ন শতভাগ সঠিক। এদেশের মানুষ সে কারণেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে।
শুধু শেকড় থেকে শিখর পর্যন্ত দুর্নীতিবাজ আগাছাগুলো উপড়ে ফেলতে হবে। দলের ভিতর ও আশ-পাশে কিছু লোক আছে যারা সারাক্ষণ শুধু ‘খাই খাই নাই নাই যাই যাই’ করে। এই বেনিফিসিয়ারি আগাছাগুলো সরিয়ে ফেলে দলের ২২তম এই সম্মেলনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এর জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি সে ধরনের পদক্ষেপ নিবেন, এটাই জাতির প্রত্যাশা।
লেখক : বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক নেতা।