নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর নিউ মার্কেট, তুরাগ ও শাহ আলী এলাকা থেকে ৫ কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ অবৈধ ভিওআইপি সরঞ্জামাদিসহ অবৈধ ভিওআইপি চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ।
র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব নিয়মিত জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, খুনী, ধর্ষক, দেশাদ্রোহী, সাইবার অপরাধী, ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী এবং অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়াও র্যাব ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে সরকার তথা দেশের সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতি দমন র্যাবের একটি গুরূত্বপূর্ণ ও চলমান অভিযান। র্যাবের এই অভিযান দেশের সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টা পর্যন্ত র্যাব-১০-এর একটি আভিযানিক দল রাজধানী ঢাকার নিউ মার্কেট, তুরাগ ও শাহ আলী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভিওআইপি ব্যবসা চক্রের মুল হোতাসহ ৩ জন ভিওআইপি ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে কাজী এম এম মাহামুদ @ ছোটন (৩২), রাকিব হাসান (৩০) ও বাবর উদ্দিন (৩০)।
এসময় তাদের নিকট থেকে ভিওআইপি ব্যবসায় ব্যবহৃত ১৯টি সিম বক্স ডিভাইস, ৪১৬টি জিএসএম এন্টেনা, ৩ হাজার ৪শ’ পিস টেলিটক সিম, ৭ মিনি কম্পিউটার, ৩টি ওয়ারলেস রাউটার, ৫ টি বাংলা লায়ন মডেম ও রাউটার, ৩ টি ল্যাপটপ, (১টি উঊখখ ও ২ টি খবহবাড়), ১টি ল্যাপটপ কুলার, ১০টি বিভিন্ন চার্জার, ৬ টি ইউ এস বি মডেম, ১২ টি পাওয়ার ক্যাবল, ২৪ টি কনসেল ক্যাবল, ৩টি থ্রি-প্ল্যাগ, ৪টি মাল্টিপ্ল্যাগ, ১টি মাউস, ৪টি মোবাইল ও নগদ ২ হাজার ৩শ’ টাকা উদ্ধার করা হয়। বিটিআরসির দেওয়া তথ্যমতে উদ্ধারকৃত আলামতের আনুমানিক মূল্য ৫ কোটি টাকা।
পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত আসামী অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী মোঃ কাজী এম এম মাহামুদ ছোটন (৩২) এর দেয়া তথ্যমতে আজ বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারী) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে রাজধানীর শাহ আলী থানাধীন গোদারীঘাট বটতালা এলাকার ১/৩৩ নং বাসার ৫ম তলায় তাহার নিজ ফ্লাট (যা তাহার ভিওআইপি ব্যবসার প্রধান কন্ট্রোল রুম) হতে ৯টি সিম বক্স ডিভাইস, ২১৬টি জিএসএম এন্টেনা, ১৯৪৩পিস টেলিটক সিম, ৪ মিনি কম্পিউটার, ২ টি ওয়ারলেস রাউটার, ৫টি বাংলা লায়ন মডেম ও রাউটার, ৩ টি ল্যাপটপ, ১টি ল্যাপটপ কুলার, ৫ বিভিন্ন চার্জার, ৪টি ইউ এস বি মডেম, ৭টি পাওয়ার ক্যাবল, ১৪টি কনসেল ক্যাবল, ২টি থ্রি-প্ল্যাগ, ২টি মাল্টিপ্ল্যাগ ও ১টি মাউস উদ্ধার করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে বিটিআরসি এর কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বিটিআরসি কর্মকার্তাদের দেয়া তথ্যমতে উক্ত অবৈধ টেলিযোগাযোগ স্থাপনার মাধ্যমে প্রতিদিন আনুমানিক প্রায় ৬ লক্ষ আন্তর্জাতিক কল মিনিট অবৈধ ভাবে দেশে টার্মিনেট করা সম্ভব।
এর ফলে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বর্তমান আন্তর্জাতিক কল টার্মিনেশন রেট অনুযায়ী দৈনিক প্রায় ৩ লক্ষ টাকা এবং বছরে প্রায় ১০ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া সম্ভব। এই উদ্ধার অভিযানকে বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক কালের সব থেকে বড় অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ী চক্র ও সরঞ্জামাদি উদ্ধার অভিযান বলে মতামত প্রদান করেন। এর ফলে বাংলাদেশ কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার চক্রের মুল হোতা ও ভিওআইপির যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয়কারী। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারকে কর ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে ভিওআইপি এর ব্যবসায়ী চালিয়ে আসছিল বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।